শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী):
দীর্ঘ ১৮ বছর পর আগামী শনিবার (১৭ মে) নিজ জেলা নীলফামারীতে ফিরছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিনের আগমন ঘিরে নীলফামারীসহ তার নির্বাচনী এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মানুষের মনে বইছে আনন্দের বন্যা।
এই উপলক্ষে আগামী শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির উদ্যোগে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এই গণসংবর্ধনাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শহরজুড়ে চলছে প্রচার প্রচারণা, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়েছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শহরে আনন্দ মিছিল বের হচ্ছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শাহরিন ইসলাম তুহিন শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। এরপর দুপুর ১২টায় তিনি নীলফামারীতে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাউল জাহাঙ্গীর আলম শেপু জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রিয় নেতা তুহিন ভাই নিজ জেলায় আসছেন। তাকে বরণ করে নিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ছাড়াও গুণীজন, সুধীসমাজ এবং সাধারণ মানুষের উদ্যোগে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, “তুহিন ভাই আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। তাকে ঘিরে নীলফামারী জেলা আজ উজ্জীবিত।”
এছাড়া রবিবার ডিমলা উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে গণসংবর্ধনা। দ্বিতীয় দিনের গণসংবর্ধনার জন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। উপজেলা জুড়ে প্রচারণার পাশাপাশি তাকে স্বাগত জানিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা টানিয়েছেন ব্যানার ও ফেস্টুন। সন্ধ্যার পর প্রতিদিন ইউনিয়ন পর্যায়ে হচ্ছে শুভেচ্ছা মিছিল।
এছাড়া সোমবার তিনি ডিমলা হয়ে জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। জলঢাকায় গণসংবর্ধনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়, গণসংযোগ, চক্ষুশিবির এবং আয়েশা ইসলাম হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার হাফেজদের মাথায় পাগড়ি পড়ানো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি।
ডিমলা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী প্রধান বলেন, “তুহিন ভাইকে ঘিরে মানুষজন খুবই আনন্দিত। শুধু বরণ করে নেওয়াই নয়, তাকে এক নজর দেখার এবং তার কথা শোনার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ডোমার-ডিমলায় তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, তার কারণে আজও তিনি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।
ডিমলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, “সাবেক সাংসদ তুহিন ভাই আগের চেয়ে আরও বেশি জনপ্রিয় এই এলাকার মানুষের কাছে। বিগত সরকারের অন্যায় অত্যাচার আর উন্নয়নের নামে লুটপাটের রাজনীতি ‘তুহিন ভাইকে’ আরও আপন করে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে ২টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ছিল মূলত হয়রানি করার জন্য এবং সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।”
নীলফামারী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে ২টি মামলা করেছিল, তা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। মামলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যের অভাব ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার দোসররা এখনও বিভিন্ন স্থানে বসে রয়েছে, এমনকি আদালতেও। যার কারণে তুহিন ভাই আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও প্রথমে তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। তবে আমরা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।”
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন, “দীর্ঘ ১৮ বছর পর তুহিন ভাই তার নিজ জেলা নীলফামারীতে আসছেন। তিনি একজন নির্যাতিত নেতা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছে। বিএনপিকে শেষ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা নিজেই শেষ হয়ে গেছেন এবং দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, কারামুক্তি ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এই এলাকার মানুষ তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পর তিনি রাতে ডোমার উপজেলার গোমনাতি ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন।
তিনি জানান, তুহিন ভাইয়ের কর্মসূচি ঘিরে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য মোটর শোভাযাত্রা ও তোরণ নির্মাণে দলের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার বলেন, “আমরা এক ঐতিহাসিক ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল, কিন্তু জনগণ তাকে আবার বীরের বেশে দেশে ফিরিয়ে এনেছে। আর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই এলাকার উন্নয়নের কাণ্ডারি তুহিন ভাইকে পেয়ে আমরা গর্বিত। কারণ তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। তার ফেরায় নতুন করে চাঙ্গা হবে রাজনৈতিক অঙ্গন তথা বিএনপির রাজনীতি। আমরা বিএনপি এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীতে আসার আগে সৈয়দপুরে একটি পথসভায় বক্তব্য দেবেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। একই দিনে বিকেলে ডোমার হাইস্কুল মাঠেও তার জন্য গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২টি মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও সাজানো মামলায় তুহিনের ২১ বছর সাজা হয়েছিল। গত ২২ এপ্রিল তিনি আমেরিকা থেকে ঢাকার নিজ বাসায় আসেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার মুক্তির দাবিতে নিজ জেলা নীলফামারী ছাড়াও রংপুর ও ঢাকায় আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ৮ মে তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।